শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মহানগরীর অন্তর্গত রায়ের বাজার আবাসিক এলাকায় উন্নত পরিবেশে অবস্থিত “রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়” একটি ঐতিহ্যবাহী বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। একটি প্রগতিশীল সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আজকের শিশু-কিশোরদের আগামী দিনের কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বশীল সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উন্নত ও আদর্শ শিক্ষাদান করাই বিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য। জাতির এ মহান উদ্দেশ্য ও স্বার্থকে সামনে রেখে রায়ের বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথার্থ ভূমিকা পালন করে আসছে এ বিদ্যালয়টি।
আমরা জানি, নানা বিবর্তনের মাধ্যমে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত রূপ লাভ করে। অত্র এলাকার তদানীন্তন সর্বসাধারণ হিন্দু, মুসলমান সম্মিলিতভাবে নিরক্ষর সমাজে শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বলিত করার জন্য ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রাজমুশুরি এম. ই. স্কুল। প্রায় আট দশক কাল এই রাজমুশুরি এম. ই. স্কুলই ছিল এলাকার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও প্রয়োজনে এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ত্যাগের ফলশ্রæতিতে ১৯৪৬ সালে জনাব আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হাশেম খান এর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় “রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়” যা পরবর্তীতে ১৯৮০ সালের জানুয়ারি থেকে এমপিও ভূক্তের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়। উক্ত বিদ্যালয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাঁকে সহযোগিতা করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন সর্বজনাব মরহুম নঈমউদ্দিন মাতবর, মরহুম মৌলভী সালেক, মরহুম মোঃ খোরশেদ আলী, মরহুম মেকাব খান, স্বর্গীয় শহীদ নিহাররঞ্জন পাল, স্বর্গীয় তরনীকান্ত পাল, স্বর্গীয় কৃষ্ণকমল পাল, মতিলাল মিয়া ও শঙ্খহরি পাল। পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ডে আরোও যাঁরা সহযোগিতা করেন তাঁদের মধ্যে মরহুম আব্দুল গফুর, মামলত আলী, হাজী মোঃ শামসুল হক, হোসেন আলী, জগদীশ চন্দ্র পালের নাম উল্লেখযোগ্য। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট সকলের যৌথ প্রচেষ্টায়, ১৯৪৮ সালের ১ এপ্রিল, শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে রাজমুশুরি এম. ই. স্কুলটিকে রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় করা হয়। সকলের প্রচেষ্টায় ১৯৪৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর বাহাদুর স্যার ফ্রেডারিক বোর্ন ও বিভাগীয় কমিশনার মিঃ এম.এম. স্টুয়ার্ট কর্তৃক বিদ্যালয়টি পরিদর্শিত হয়।
রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের রূপকার মাননীয় সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব মোঃ আবুল কাসেম খান। তিনি দীর্ঘ ৩২ বৎসর যাবত বিদ্যালয়ের ভাইস-চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান পদে সফল ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে বিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে সঠিক পথে চলার জন্য এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য একটি নিবেদিত প্রাণ নির্বাচিত পরিচালনা পরিষদ রয়েছে যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তাঁরই সুযোগ্য পুত্র জনাব মোঃ হাসান-উল-হামিদ খান। বর্তমান পরিচালনা পরিষদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলী বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও গুণগত মান আরো উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। এ বিদ্যালয়ের গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে লেখাপড়ায় অধিক উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বার্ষিক এককালীন বৃত্তি প্রদানে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য একটি ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে যার নামকরণ করা হয়েছে “মরহুম আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হাশেম খান স্মৃতি ফাউন্ডেশন”।
এ ছাড়াও মরহুম আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হাশেম খান এর একমাত্র সুযোগ্য পুত্র জনাব আলহাজ্ব মোঃ আবুল কাসেম খান- এর ব্যক্তিগত এককালীন আর্থিক সহায়তায় এবং বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয়েছে “আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হাশেম খান বিজ্ঞানাগার” নামে একটি অত্যাধুনিক বিজ্ঞানাগার, ঢাকা-১০ আসনের সাবেক মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সাহেবের সহযোগিতায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কম্পিউটার ল্যাবঃ এবং ২০১০ সালে জনাব আলহাজ্ব মোঃ আবুল কাসেম খান সাহেবের নামে একটি অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম তৈরী করা হয়েছে। তাছাড়া একটি সুন্দর নামাজের কক্ষ রয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে “সততা স্টোর”। বিদ্যালয়ের দক্ষিণ বøকের নিচতলায় নির্দিষ্ট স্থানে অভিভাবকদের বসার সু-ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতীয় শিল্প সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনে রয়েছে বিদ্যালয়ের স্বর্ণপদকসহ ঈর্ষনীয় সাফল্য। ২০১৫ সালে ঢাকা-১০ আসনের সাবেক মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সাহেবের ব্যক্তিগত আর্থিক অনুদানে উত্তর ভবনের তৃতীয় তলায় নির্মিত হয় “শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব” ০৮ (আটটি) মাল্টিমিডিয়া (ওঈঞ) শ্রেণি কক্ষ, এবং সমৃদ্ধ ও সুসজ্জিত করা হয় বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও “আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হাশেম খান বিজ্ঞানাগার” এবং ২০১৬ সাল থেকে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের “শহীদ শামসুন্নেসা আরজু মণি স্মৃতি ট্রাস্ট” বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া তাঁর উদ্যোগে উত্তর ভবনের চতুর্থ তলাকে ষষ্ঠ তলায় রূপান্তরিত হয়েছে এবং পশ্চিম ভবনকে ভেঙ্গে সরকারি উদ্যোগে ছয় তলা নির্মিত হয়েছে। ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অবস্থিত একটি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যার শিক্ষা ক্ষেত্রে রয়েছে সুষ্ঠু পরিবেশ। সরকারিভাবে আরো পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিদ্যালয়টি সর্বক্ষেত্রে আরো উন্নতি লাভ করবে বলে আমরা আশা রাখি।